বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

বাংলাদেশের সিমেন্ট কারখানার তালিকা


সিমেন্ট তৈরিতে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। প্রথম ধাপে কাচামাল আহরণ অর্থাৎ মুলত কাদা ও চূনাপাথর আহরণ, দ্বিতীয়ত কাচামাল গুলোকে পানি দিয়ে দ্রবন তৈরি করে রোটারি কিলন মেশিনে পুড়িয়ে ক্লিঙ্কার তৈরি করা তৃতীয় পর্যায়ে গ্রাইন্ডিং মিলে গুড়ো করে সিমেন্ট তৈরি কারে সাইলোতে জমা করা এবং সব শেষে বস্তজাত করে বাজরে অর্থাৎ ভোক্তাদের কাছে পৌছে দেয়া ।
 বাংলাদেশের সিমেন্ট কারখানার তালিকা করলে সেটা অনেক দীর্ঘ হবে। কিন্তু বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ সিমেন্ট কারখানা অর্থাৎ উপরের সব গুলো ধাপ পুরন  করে এই রকম সিমেন্ট কারখানা আছে মাত্র দুটি। ১) ছাতক সিমেন্ট ও ২) লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। অন্যান্য সিমেন্ট কারখানা গুলো বিদেশ থেকে ক্লিঙ্কার গ্রাইন্ডিং মিলে গুড়ো করে সিমেন্ট তৈরি কারে সাইলোতে জমা করা এবং সব শেষে বস্তজাত করে




আরামিট গ্রুপ বাংলাদেশের অত্যান্ত পুরাতন একটি প্রতষ্ঠান, যার একটি পণ্য হল এসবেস্টর সীট। এই সীট বানানোর জন্যে মান সম্মত সিমেন্টের প্রয়োজন থেকে ১৯৯৯ সালে আরমিট সিমেন্ট লিঃ  যাত্র শুরু করে, যার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭০০ মেঃ টন । সম্প্রতি আরমিট সিমেন্ট লিঃ তাদের দ্বিতীয় কারখানা চালু করেছে যার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ মেঃ টন । নিজেদের প্রয়োজনেই আরমিট সিমেন্ট লিঃকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন সিমেন্ট তৈরি করতে হয়। বর্তমানে আরমিট সিমেন্ট লিঃ ভারত ও মিয়ানমারে সুনামের সাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সিমেন্ট রপ্তানি করছে।
 
বসুন্ধরা সিমেন্ট হল বাংলাদেশের একটি অন্যতম শিল্প সংস্থা বসুন্ধরা গ্রুপের (Bashundhara Industrial Complex Ltd (BICL)) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ।এই প্রতিষ্ঠানের দুটি সিমেন্ট কারখানা আছে ।
একটি হচ্ছে খুলনার মংলায়। এই কারখানার সিমেন্টের মার্কা  “King Brand Cement। এটি প্রথম উৎপাদন শুরু করে ২০১২ সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ১.৬২ লক্ষ্য মেট্রিক টন ।
অপর কারখানাটি হচ্ছে  নারায়নগঞ্জের মাদানগঞ্জে, যা অল্প কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে।  যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ২.১০ লক্ষ্য মেট্রিক টন।  অথাৎ বর্তমানে বসুন্ধরা গ্রুপের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ৩.৭২ লক্ষ্য মেট্রিক টন। এই গ্রুপ তদের পরবর্তী  উৎপাদন  লক্ষমত্রা নির্ধারণ করেছে ৪.৫ লক্ষ্য মেট্রিক টন ।

আকিজ গ্রুপ বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো শিল্প সংস্থা গুলোর মধ্যে অন্যতম যার প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৫৩ সাল। নারায়ণগঞ্জের শীতালক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত  আকিজ সিমেন্ট কারখানা প্রথম ২০০২ সালের ৩রা নভেম্বারে উৎপাদন শুরু করে । বর্তমানে এর উৎপাদন ক্ষমতা --- লক্ষ্য মেট্রিক টন। আকিজ সিমেন্ট বাংলাদেশে প্রথম “Vertical Roller Mill (VRM) ব্যাবহার করে সিমেন্ট উৎপাদন করে।

মংলা সিমেন্ট,  বাংলাদেশ সেনা কল্যাণ সংস্থার একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান । এটি খুলনার মংলা বন্দরের কাছে পশুর নদীর তীর  অবস্থিত। এই কারখানা উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৪ সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় ১০০মেট্রিক টন ।এই কারখানার দুটি মিল আছে। একটির উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ৩.৯ লক্ষ্য মেট্রিক টন ।আর অপরটির উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ২.১ লক্ষ্য মেট্রিক টন । অর্থাৎ মংলা সিমেন্টের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ৬.০ লক্ষ্য মেট্রিক টন ।
মংলা সিমেন্ট কারখানায় দুই ধরনের সিমেন্ট তৈরী হয়,
1.      Portland Cement (CEM I /42.5N, CEM I /52.5N).
2.       Portland Composite Cement (CEM II/B-M(SVL) 42.5 N).

ডায়মন্ড সিমেন্ট লিঃ,  হাবিব গ্রুপ বাংলাদেশ এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান । এটি চট্টগ্রাম বন্দরের বিপরীতে কর্ণফুলী  নদীর তীরে  অবস্থিত। এই কারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৮ সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় ৪০০০মেট্রিক টন । অর্থাৎ ডায়মন্ড সিমেন্টের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর -- লক্ষ্য মেট্রিক টন । কর্ণফুলী নদীর পারে নিজস্ব জেটি থাকায় কাচামাল পরিবহন ও উৎপাদিত সিমেন্ট বিক্রির ক্ষেত্রে ডায়মন্ড সিমেন্ট একটি বারতি সুবিধা ভোগ করে।

ইস্টার্ন সিমেন্ট লিঃ
ইস্টার্ন সিমেন্ট লিঃ,  ডোরেন (DOREEN)  গ্রুপ বাংলাদেশ ( পূর্বে এর নাম ছিল সিদ্দিক গ্রুপ)  এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান । এটি মেঘনা  নদীর তীরে  অবস্থিত। এই কারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৯ সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর -- লক্ষ্য মেট্রিক টন । এই সিমেন্ট দেশে সাত ঘোড়া সিমেন্ট নামে পরিচিত কারন এর মার্কা হচ্ছে “Seven hores” বা সাত ঘোড়া

আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম সিমেন্ট ইন্ড্রাস্ট্রি লিঃ,  তাহের গ্রুপ বাংলাদেশ এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান । এটি চট্টগ্রামের অদূরে সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরাতে  অবস্থিত। এই কারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৯ সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ১৭০০০ মেট্রিক টন ।

এই কারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ২১এপ্রিল ২০০১সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ১৭০০০ মেট্রিক টন । সিমেক্স সিমেন্ট লিঃ,  সিমেক্স ইন্টারন্যাশনাল এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান । এটি একটি আন্তর্জাতিক নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের ৫০টির মত দেশে  তাদের প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশে  মাহমুদ নগর,বন্দর,নারায়ণগঞ্জের শীতালক্ষা নদীর তীরে সিমেক্স সিমেন্ট লিঃ অবস্থিত। এই কারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ২১এপ্রিল ২০০১সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ৫৫০০০০ মেট্রিক টনএই সিমেন্টের মার্কা CEMEX

নিটল সিমেন্ট লিঃ বাংলাদেশের পুরানো সিমেন্ট কারখানা গুলোর একটি। এই প্রতিষ্ঠানের কারখানা উত্তরবঙ্গে এবং বিক্রির মূল বাজারও উত্তরবঙ্গই । নিটল সিমেন্ট লিঃ দূই ধরনের সিমেন্ট বানয় ১) ছাই বর্ণের সিমেন্ট(Grey Cement) ২) সাদা সিমেন্ট(White Cement )। ছাই বর্ণের সিমেন্টের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ১৩০০০০ মেট্রিক টন সাদা সিমেন্টের মার্কা হল বিড়লা (Birla)। মূলত  ইন্ডিয়ার সাথে যৌথ উদ্যোগে সাদা সিমেন্ট তৈরি হয়। যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর ২০০০০ মেট্রিক টন

এস,আলম  সিমেন্ট লিঃ,  এস,আলম  সিমেন্ট গ্রুপ বাংলাদেশ এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান । এটি চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত। এই কারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে -- সালে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি দিন ১২০০ মেট্রিক টন । এই সিমেন্টের  মার্কা হচ্ছে মিনার

হোন্দাই সিমেন্ট বাংলাদেশ ক্রয়ের মাধ্যমে  হোলসিম বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ২০০০সালে। পরবর্তিতে তারা আরও দুটি  সিমেন্ট কারখানা ১) ইউনাইটেড সিমেন্ট, মেঘনা ঘাট ২) সাইহাম সিমেন্ট, মংলা  ক্রয় করে এবং বাজার বিস্তার করে।
.


এম,টি,সি সিমেন্টের প্রচলিত নাম হচ্ছে বাঘ মার্কা সিমেন্ট। চীনা  কম্পানি CITIC engineeringএর কারিগরি সহায়তায় ১৯৯৮ সালে এই  প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। দূটি কারখানায় তারা  সিমেন্ট উৎপাদন করে । দূটির মধ্য একটি মেঘনা ঘাট, নারায়ণগঞ্জ ও অপরটি পাগলা , নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত



হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিঃ আন্তরজাতিক সিমেন্ট কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট গ্রুপের একটি অঙ্গ  প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সিমেন্টের মোট চাহিদার ১৩%  হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিঃ তার দুটি কারখানা দিয়ে পুরন করে। কারখানা দুটি হচ্ছে
১) চট্রগ্রাম সিমেন্ট ক্লিঙ্কার গ্রাইনডিং  কম্পানি লিঃ। যার মার্কা  হচ্ছে রুবি ।
২) স্ক্যান সিমেন্ট লিঃ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা
এই দুটি কারখানার  মোট উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ১.৫ লক্ষ মেট্রিক টন ।