মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৪

জমাট বাধা (Curing,সেট)


Curing এর কোন যুতসই বাংলা শব্দ নেই, সাধারণত সিমেন্ট জমাট বেধে শক্ত হওয়কে বা শক্তি অর্জনের প্রক্রিয়াকে Curing বলে । আর Curing হতে  যে সময় নেয় তাকেই  টাইম বলে। সিমেন্ট Curing /সেট হয় পানির সঙ্গে মেশানোর পর, তখন একটি জটিল জলীয়  রাসায়নিক বিক্রিয় সংগঠিত হয়। তখন সিমেন্টের উপাদান গুলো পানির সাথে বিক্রিয়ার শেষে ধীরে ধীরে পানি ছেঁড়ে দিয়ে শক্ত অনুতে (crystals /স্ফটিকে) পরিণত হয়, এই অনু গুলো পরস্পরের সাথে এক থরনের বন্ধন সৃষ্টি করে যার বহিঃপ্রকাশ হল শক্ত সিমেন্ট বা অন্য কথায় এটা হল সিমেন্টের শক্তির বহিঃপ্রকাশ।  সিমেন্টে আম্ন কিছু উপাদান ব্যাবহার করা হয় যা আদ্রতা ধরে রাখে, আদ্রতা ধরে রাখার ফলে সে ধীরে ধীরে পানি জমাট বাধে ও ও তার চুড়ান্ত শক্তি (final strength) অর্জন করে। এমন একটি উপাদান হল জিপ্সাম যা পোর্টল্যান্ড সিমেন্টে সবসময় ব্যবহার হয়, এটি "মিথ্যা সেট"("flash setting")  ও দ্রুত জমাট বাধা রোধ করে। সিমেন্ট ধীরে ধীরে জমাট বাধার ফলে মুলত যে উপকারটি হয় তা হল সিমেন্ট নিয়ে কাজের জন্য দীর্ঘ সময় পাওয়া যায়। সিমেন্ট কতটা সময় পরে জমাট বাঁধবে তা নির্ভর করে সিমেন্টে মিশ্রিত কাচামাল , তাদের অনুপাত ও পরিবেশগত অবস্থার উপর। সিমেন্ট সাধারণত ২০ মিনিট পর থেকেই জমাট বাধতে শুরু করে  (initial সেট) এবাং মুটামুটি ২:৩০ঘণ্টার মধ্য সে একটা শক্ত রুপ নেয় (Final সেট) কিন্তু পরিপূর্ণ ভাবে শক্ত হতে তার ১ মাসের মত সময়ও লাগতে পারে। তবে ১ সাপ্তার মধ্যেই সিমেন্ট কাজ চালানোর মত শক্তি অর্জন করে ফেলে।    

শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০১৪

বিভাজক বা Separators


ভূমিকা:

Separators  বা বিভাজক সিমেন্ট শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ন যন্ত্র । সিমেন্টের ফাইননেস উন্নত করার জন্য Separators  আবশ্যক।

কিন্তু বিভাজক( Separators) কি?  




মূলত, বিভাজক মোটা কণা থেকে সূক্ষ্ম কণা আলাদা করে।
সাধারণত সূক্ষ্ম কণা গুলোকে পূরনাঙ্গ সিমেন্ট হিসাবে সংগ্রহ করা হয় আর মোটা কণা গুলো আরও সূক্ষ্ম হওয়ার জন্য গ্রাইন্ডিং মিলে ফেরৎ  পাঠানো হয়
বিভাজকের( Separators) মূল সুত্র হল মোটা কণা সূক্ষ্ম কণাকে দুই দিকে প্রবাহিত করা এবং  নিশ্চিত করা হয় যে  মোটা কণা প্রবাহে যেন কোন সূক্ষ্ম কণা না থাকে  অন্য দিকে সূক্ষ্ম কণার প্রবাহে যেন কোন মোটা কণা না থাকে

একটি কার্যকর বিভাজেকর আরেকটি বিশিষ্ট হল সূক্ষ্ম কণা যাতে মিলে কম প্রবেশ করে, এতে বিভাজক থেকে কণা মিলে কম আসবে এবং একই কণা বারবার গ্রাইন্ডিং (Overgrinding) হবে না এতে শক্তি (Power) কম খরচ হবে ও মিলের উৎপাদ বাড়বে । 

বিভাজক প্রধানত দুই ধরনের  আছে, স্ট্যাটিক বিভাজক এবং গতিশীল বিভাজক:


এ দুটির মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল,  স্ট্যাটিক বিভাজকের কোন অংশ চলে না বা নড়ে না এবং এতে শুধুমাত্র যান্ত্রিক পরিবর্তন করা যেতে পারে

স্ট্যাটিক বিভাজকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়: 

- সাইক্লোন (Cyclones)
- স্ট্যাটিক বা কঙ্কর (Static or grit) বিভাজক
- ভী (V) বিভাজক

ডায়নামিক বিভাজকেতিন ভাগে বিভক্ত করা হয়:

- Turbo বিভাজক (Turbo separators) ( যা প্রথম প্রজন্মের বিভাজক )
- ঘূর্ণিঝড় বিভাজক (Cyclone separators) (যা দ্বিতীয় প্রজন্মের বিভাজক) 
- খাঁচা টাইপ( Cage type) বিভাজক /উচ্চ দক্ষতা বিভাজক (high efficiency separators) (যা তৃতীয় প্রজন্মের বিভাজক)

বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০১৪

সিমেন্ট গ্রাইন্ডিং মিল (Cement Grinding Mill)

গ্রাইন্ডিং মিল বা সিমেন্ট কল/মিল হল সেই যন্ত্র যা শক্ত ক্লিংকারকে সূক্ষ্ম ধূসর পাউডারে পরিণত করে এই সূক্ষ্ম ধূসর পাউডারকেই সিমেন্ট বলা হয়  বর্তমানে  সিমেন্ট তৈরিতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় বল মিল (Ball mill) এছাড়াও এখন উল্লম্ব বেলন মিল (vertical roller mills) নামে নতুন এক প্রকার সিমেন্ট কল/মিল ব্যাবহারিত হচ্ছে  যা বল মিলের চেয়ে বেশি কার্যকর

ইতিহাস

যেমন জেমস পার্কার, জেমস ফ্রস্ট এবং জোসেফ Aspdin দের তৈরি সিমেন্ট অর্থাৎ প্রথম দিকের  জলবাহী সিমেন্ট ( hydraulic cements) অপেক্ষাকৃত নরম ছিল  যা আদিম প্রযুক্তিব্যবহার করে অর্থাৎ flatmillstones (শীল পাটা) দিয়ে সহজেই গুড়া কারা যেত  ১৮৪০  পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট এর উত্থানের পর বেশ কঠিন হয়ে পরে, কারন কিন মেশিনে উৎপাদিত ক্লিংকার millstone-এর মতই শক্ত হত তখন সিমেন্টে  ১০০ মাইক্রোমিটার ব্যাস কণা গড়ে ২০% বেড়ে যায় ,এর ফলে সিমেন্টের শক্তি সঞ্চয় ক্ষমতা কমে যায়   ফলে ক্লিংকার গুড়ো কারার জন্য নতুন পদ্যতি আবিস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ১৮৮৫ সাল থেকে, ইস্পাত শিল্পের উন্নয়ন শুরু হয় এবং বিভিন্ন ধরনের উন্নত  ইস্পাত আবিস্কার হয় এই সব উন্নত  ইস্পাত ব্যাবহার করে সিমেন্ট গুড়ো কারার নতুন নতুন সরঞ্জাম তৈরি হয় বল মিল হল সেই সরঞ্জাম গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর মেশিন

যে সকল উপকরণ ভাঙ্গা হয় 

পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের প্রধান উপাদান হল ক্লিংকার পোর্টল্যান্ড সিমেন্টে  একটু ক্যালসিয়াম সালফেটের (সাধারণত 3-10%) যোগ করা হয় tricalcium aluminate- এর শুকানোর সময়কে ধীরগতি করার জন্য ক্যালসিয়াম সালফেট প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় জিপসামে সাধারণত সর্বোচ্চ % পর্যন্ত ব্যাবহার করা হয় মিশ্র সিমেন্টে  প্রাকৃতিক pozzolans, ছাই, চুনাপাথর, সিলিকা ইত্যাদি 40% পর্যন্ত সংযোজন করা যায়

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

গ্রাইন্ডিং মিল বা বলমিল যখন ঘুরে তখন মিলের ভিতরের বল গুলোর পারস্পরিক সংঘর্ষে মিলের ভিতরে তাপ উত্পন্ন হয় এই তাপের জিপসামের (CaSO4.2H2O)  পানি বের হয়ে বাসিনেট (bassanite) (CaSO4.0.2-0.7H2O) অথবা ওয়াই-অ্যানহাইড্রাইট (y-anhydrite) (CaSO4. ~ 0.05H2O) গঠন করে যদি উক্ত উপাদান গুলো বেশী পরিমানে গঠিত হয় তাহলে সিমেন্ট দ্রুত জামাট বাঁধবে এই দ্রুত জামাট বাঁধাকে "মিথ্যা সেট" ("false set") বলে, মিলের উচ্চ তাপমাত্রা এর কারণে এটি হয়ে থাকে মিলের আউট লেট ( যে দিক দিয়ে সিমেন্ট বের হয়)  তাপমাত্রা  কোন রকমেই ১১৫° সেঃ এর বেশী গ্রহণযোগ্য নয় অপরপক্ষে মিলের তাপমাত্রা যদি কম হয়, তাহলে  সিমেন্ট জমাট ধীরে বাঁধবে, জমাট বাধার সময় দানাদার হবে এবং শক্ত কম হবে

বল মিল

          
বল মিল হচ্ছে একটি অনুভূমিক সিলিন্ডার যা আংশিকভাবে বিভিন্ন আকারের ইস্পাত বল দিয়ে ভরা হয়, সিলিন্ডারটি যখন তার নিজস্ব অক্ষের উপর ঘুরে (rotates)  তখন সিলিন্ডারের ভিতরের বল গুলো গড়াগড়ি করে এবং পরস্পর পরস্পরকে জোরালো ভাবে আঘাত করে এই বল গুলকে গ্রাইন্ডিং মিডিয়া বলা হয় গ্রাইন্ডিং মিডিয়া সাধারণত উচ্চ ক্রোমিয়াম ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয় বল মিল যখন ঘুরে তখন বলের মধ্যে এক প্রকার আবর্তনের গতি (critical speed) সৃষ্টি হয় এই গতির (centrifugal action) কারনে বল গুলো মিলের ভিতরের ছাদ পর্যন্ত উঠে নিচে পরে কাচামাল (ক্লিঙ্কার,জিপসাম) এই বলের আঘাতে সূক্ষ্ম কনায় পরিণত হয়, অর্থাৎ সিমেন্টে পরিণত হয় মিলের ঘূর্ণন গতি (rpm) নির্ধারণের সুত্র - NC = 42.29 / √d এখানে d তে মিলের অভ্যন্তরীণ ব্যাস বুঝায়, আর মাপের একক হল মিটার   মিলের ঘূর্ণন গতি (rpm) সাধারণত মিলের অভ্যন্তরীণ ব্যাসের ৭৫% নির্ধারণ করা হয় যেমন, মিলের অভ্যন্তরীণ ব্যাস যদি মিটার হয় তাহলে তার আরপিএম নির্ধারণ করতে হবে ১৪(rpm)
বল মিল  সাধারণত অন্তত দুটি চেম্বার বিভক্ত করা হয়, এতে বিভিন্ন আকারের মিডিয়া(বল) ব্যবহার, যা ফিড ইনপুট (ক্লিংকারের) আকারের উপর নির্ভর করে তবে বর্তমানে জনপ্রিয় রোলার মিলে সাধারণত একটি চেম্বারই   বড় বল গুলো সাধারনত ইনলেট চেম্বারে থাকে যাতে বড় ক্লিংকার গুলো (ব্যাস 25 মিমি উপর হতে পারে) ভাঙ্গতে পারে ইনলেট চেম্বারে বলের ব্যাস সাধারণত ৬০-১০০মিমি হয় দ্বিতীয় চেম্বারের বলের ব্যাস সাধারণত ১০-৮০মিমি হয় বড় মিডিয়া সিমেন্টে প্রয়োজনীয় অতি সূক্ষ্ম কণা সৃষ্টি করতে পারে না, কিন্তু ছোট মিডিয়া তা পারে সাধারন নিয়ম অনুযায়ী মিডিয়ার  আকার নির্ভর করে কোন চেম্বারে কোন আকারের ক্লিংকার কনা গুড়ো করতে হয় তার উপর   ক্লিংকারের আকারের উপর ভিত্তি করে বা চেম্বারের মিলও তৈরি হয়েছে মিলের ভেতরে কৃত্তিম বায়ু প্রবাহ তৈরি করা হয় যাতে মিল ঠাণ্ডা থাকে কাচা মাল থেকে নির্গত গাঢ় আর্দ্রতা বের হ্যে যায় প্রবাহিত বায়ুর সাথে সূক্ষ্ম কণার সিমেন্ট বের হয়ে যায় যা আটকানর  জন্যে এক ধরনের কাপড়েরের ব্যাগ ব্যাবহার করা হয় যা ব্যাগ ফিল্টার (Bag filters) নামে পরিচিত

ক্লোজ সারকিট মিল (Closed-circuit System)

বল মিলের দক্ষতা বা কার্যক্ষমতা (efficiency) উন্নত তখনই বলা যায় যখন মিল যত বেশী অতি সূক্ষ্ম কণা তৈরী করতে পারবে তাই বল মিলের থেকে যে সিমেন্ট বের হয় তার থেকে মোটা কনা গুলো আলাদা করে সেগুলিকে আবার মিলে ফেরত পাঠাতে হয় আরও গুড়ো হওয়ার জন্য সাধারণত মিল থেকে যে সিমেন্ট বের হয় তার ১০-৩০% পৃথক হয়ে আবার মিলে ফেরত আসে   সাধারণত মিল থেকে যে সিমেন্ট বের হয় তার ৮৫-৯৫% সিমেন্ট সাইলোতে চলে যায় যেই মিল থেকে সর্বনিম্ন পরিমাণ মোটা কণা বের হয় সেই মিলের কার্যক্ষমতা (efficiency)ততবেশী সিমেন্ট নির্মাণের এটি হচ্ছে মূল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিমেন্ট থেকে মোটা কণা সূক্ষ্ম কণা আলাদা বা বিভক্ত করার যন্ত্রকে বিভাজক বা Separator বলে আধুনিক বিভাজক বা Separator গুলো আরও নিখুত ভাবে সূক্ষ্ম কণা আলাদা করতে পারে এগুলো অনেক কম শক্তি (power) খরচ করা ছারাও সিমেন্ট মিলের ভিতরের উতপ্ত কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে


রোলার (বেলন) মিল   


রোলার মিল অনেক আগে থেকেই অন্যান কারখানায় বিশেষ করে যে সকল করখানার নরম কাঁচামাল গুড়ো করা হয় সেসকল কারখানায় ব্যাবহার হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি রোলার মিল ও উচ্চ দক্ষতা সম্পন্য বিভাজক (High-efficiency separators) মিলিত ভাবে সিমেন্ট কারখানায় কাঁচামাল গুড়ো  জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখা গেছে কাঁচামাল গুড়ো সময় বলমিলের বল কাচা মালের উপর যে চাপে আঘাত করে রোলার মিল তার  তুলনায় অনেক বেশী চাপ প্রদান করে ফলে কাঁচামাল বেশী গুড়ো হয়, এক কথায় রোলার মিল, বলমিলের তুলনায় আরো দক্ষ (efficient) । এবং জ্বালানি খরচ সাধারণত বল মিলের প্রায় অর্ধেক ।

উচ্চ চাপ রোলার (বেলন) মিল   


এটি একজোড়া রোলার দিয়ে গঠিত, এদের পরস্পেরের মধ্যে ৮-৩০ মিমি ব্যাবধান থাকে, যা আবর্তিত হয় ০৯-১.৮  MS গতিতে । রোলের গুলো এমন ভাবে নকশা করা হয় যাতে ঘুরার সময় এত ৫০ এমপিএ বা আরো বেশী চাপ প্রদান করতে পারে। ক্লিংকার এই দুই রোলারের মধ্যে দিয়ে নিচে পরে ও ফাইন সিমেন্টে পরিণত হয়। তারপরও এতে কিছু সমস্যা আছে। বর্তমানে এই মিলটি "প্রাক মাড়াই/চূর্ণ কারক" হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।  এই প্রক্রিয়ায় সিমেন্ট রোলের থেকে বের হয়ে একটি এক চেম্বারের বল মিলে প্রবেশ করে এই মিল থেকে  খুব ভাল ও ফাইন সিমেন্ট বের হয়। একটি সাধারন বল মিল সিস্টেমের সাথে তুলনায় ২০-৪০% দ শক্তি খরচ কম করে।