শুক্রবার, ১ মে, ২০২০

বল মিলের ইতিহাস, বিবর্তন


প্রথমদিকে ক্লিংকার গুড়ো করে সিমেন্ট বানানোর জন্যে যে প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হতো তা অনেকটা আমাদের পুরানো সময়ের যাতা বা ঘানীর মতো । দুটো বড় পাথরকে ঘুড়িয়ে তার নিচে ক্লিংকার গুড়ো করা হতো। যেহেতু তখনকার ক্লিংকার তুলনামূলকভাবে অনেক নরম ছিল তাই সেই সময়ের প্রেক্ষিতে এই ঘানি পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় ছিল।  ১৮৪০ এর দশকের শেষের দিকে পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট  একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, তা হচ্ছে ক্লিঙ্কারের হার্ডনেস বা কঠোরতার । পুরানো পদ্ধতিতে এই ক্লিংকার তেমন গুড়ো হতোনা , যারফলে মোটা সিমেন্টের  তৈরি হচ্ছিল (শতকরা ২০ ভাগ সিমেন্টই ১০০ মাইক্রনের বেশি থাকতো )  এর ফলে সিমেন্ট জমাট বাধার গতি খুবই ধীর ছিল এবং চুনের বড় দানার কারণে জমাট বাধার পরে সিমেন্ট প্রসারিত হয়ে ফেটে যাওয়ার লক্ষন দেখা যায়। যদিও ১৮৪০এর পরে থেকে বল মিল ব্যাবাহার শুরু হয়, কিন্তু মোটাদানাকে শুক্ষ করার এই সমস্যাটা দীর্ঘদিন ছিল।ধীরে ধীরে উন্নত মানের লোহা ও ইস্পাতের আবিষ্কার ও ব্যাবহার এবাং উন্নত ইস্পাত ব্যাবহার করে উন্নত মানের মিল ও বল তৈরির ফলে সিমেন্টের সুক্ষতা বৃদ্ধি হতে থাকে বিশেষ কর ১৯  শতকের শেষভাগে গ্রাইন্ডিং প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটে।  বিংশ শতাব্দেইতে এসে বালা যায় ক্লিংকারের এবাং সিমেন্ট উৎপাদনে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার হয় । ক্লিংকার ও সিমেন্টের শক্তি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির প্রযুক্তি ও রসায়ন উদ্ভাবন হতে থাকে । ফলে চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো প্রকারের সিমেন্ট তৈরি করা শুরু হায়।

বল মিলস :

টাম্বলিং( tumbling mil) মিল ঃ

যদিও ১৮৪০ সালে প্রথমদিকে বল মিল আবিষ্কার ও ব্যাবহার শুরু হয়েছিল  কিন্তু বলা যায়, মূল অগ্রগতিটি হয়েছিল ১৮৭০ থেকে ১৯০০ এ জার্মানিতে ,সেখানে সিমেন্টের ক্রমবর্ধ্মান চাহিদার কারনে  সিমেন্ট এবং রাসায়নিক শিল্পসংস্থা গুলি সূক্ষ্ম ও চাহিদা সম্পন্য সিমেন্ট তৈরিতে গভেষনা শুরু করে। সর্বপ্রথম একটি যুক্তিসঙ্গত গ্রহণযোগ্য বলমিল বা  টাম্বলিং( tumbling mil) মিলের ডিজাইন করে  ব্রুকনার এবং সাচসেনবার্গ ভাই দ্বয়  এবং ১৮৮৫ সালে গ্রাসনের ওয়ার্কশপে এটি নির্মাণ করাছিল, যা পরবর্তী সময়ে ক্রুপ কোম্পানি এটি অধিগ্রহণ করেছিল।একটি স্টিল ড্রামের মধ্যে কিছু খাজ যুক্ত স্টিল প্লেট লাইনার হিসাব লাগানো হয়েছিল এবং তাতে ৬০ থেকে ১০০মিমি ডায়ার স্টিল বল ব্যাবহার করা হয়েছিল।ফাইন কনাগুলো ছিদ্রযুক্ত গ্রাইন্ডিং প্লেটের ছিদ্র দিয়ে নিচে নেমে আসার ব্যাবস্থাছিল। ফাইন সিমেন্ট আলাদা করার জন্যে নিচে কিছু ছাকুনির ব্যাবস্থা ছিলো যা ভেদ করে সুক্ষ কনা গুলো মিলের নিচের কনভেয়রে পরতো এবং মোটাদানা গুলো একটি  ডিসচার্য স্ক্রিনের মাধ্যমে আলাদা হয়ে বের হতো। ১৯০০ সাল পর্যন্ত এই মিলটিতে ধীরেধীরে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হয় যাতে এরথেকে অধীকতর সুক্ষ সিমেন্ট তৈরি করা যায় এবং এর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়।

এই একই সময়ে এফ.এল.স্মিথ অ্যান্ড কোং বানিজ্যিকভাবে সিমেন্ট মিল তৈরি করা শুরু করে এবং বেশ সুনাম আর্জন করে। তারা এক ফরাসি উদ্ভাবকের কাছ থেকে একটি টিউব মিলের স্বত্ব কিনে নেয়, এবং এটিতে নতুন করে ডিজাইনের পরে বিশ্বব্যাপী বিক্রি শুরু করেছিল।

টিউব মিল :

আগের মিলটিকেই ( টাম্বলি মিল tumbling mil) অনুভূমিক ভাবে ডিজাইন করে টিউব মিলের ধারনাটি তৈরি হয়েছিল। একটি লম্বা টিউব একটি নির্দিষ্ট অক্ষাংশের বারবার আবর্তিত করা হয় আর ভিতরে বল দেয়ার ফলে বলগুলোও আবর্তিত হতে থাকে। টিউবের ঘুর্ননের গতি কমিয়ে দেয়ার ফলে বলগুলো মিলের ভিতরে অর্ধেক ঘুরেই নিচেপরে যায় এবং এই ঘর্ষন শক্তিকে ব্যাবহার করেই আধুনিক বল মিলের যাত্রা শুরু হয়।

একটি স্টিলের টিউবকে ইস্পাতের  বল দিয়ে কমপক্ষে  অর্ধেক পূর্ণ কারা হয়, নলটি ঘোরার সাথে সাথে বলগুলি ক্রমশ উর্ধমুখী হতে থাকে , তবে মিলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে তারা নলের নীচে পরে যায়, ফলে একটি বলের উপরে আরেকটি বল সজোরে আঘাত করতে থাকে এবং এই দুই বলের মধ্যে কাচামাল অর্থাৎ ক্লিংকার থাকলে ক্লিংকারগুলো ক্রমশ গুড়ো হতে থাকে।প্রথমে এই মিলেও ছিদ্রযুক্ত গ্রাইন্ডিং প্লেটের ব্যাবহার করা হয়েছিল, প্রথমদিকে টিউব গুলো এতো লম্বা হতো না ।

পরবর্তীতে, ক্লিংকার বা কাচামাল  মিলের এক প্রান্তদিয়ে প্রবেশ করানো  হয় এবং ধীরে ধীরে অন্যপ্রান্ত দিয়ে গুড়ো হয়ে পন্যটি বের হয়ে আসতো।তখন মূলত  গ্রাইন্ডিংয়ের  সূক্ষ্মতা ফিডের হার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। ক্লিংকার শক্ত হওয়ার কারনে কিছুকিছু কোম্পানি একাধীক মিলব্যাবহার করতো একটি মিলে কিংকার গুলোকে ক্রাশিং করা হতো ও অপরটিতে  ঐ ক্রাশ পন্যটি ফাইন করা হতো ।পরবর্তিতে মিলকে লম্বা করে এর মধ্যে ছিদ্রযুক্ত পার্টিশন ব্যাবহার করে দুই বা তিন কক্ষ বিশিষ্ট মিল তৈরি করা হয় যার একটি কক্ষ ক্রাশিং ও অপরটি ফাইননেসের কাজ করে ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন